Posts

kazi nojrul islam

বিদ্রোহী

Image
বিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলাম বল বীর – বল উন্নত মম শির! শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির! বল বীর – বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’ চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি’ ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া, উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর! মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর! বল বীর – আমি চির উন্নত শির!  আমি চিরদূর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস, মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস! আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর, আমি দুর্বার, আমি ভেঙে করি সব চুরমার! আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল, আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল! আমি মানি না কো কোন আইন, আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন! আমি ধূর্জটি, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব-বিধাতৃর! বল বীর – চির-উন্নত মম শির!  আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে...

আসমানী প্রেম -নির্মলেন্দু গুন

নেই তবু যা আছের মতো দেখায়  আমরা তাকে আকাশ বলে ডাকি,  সেই আকাশে যাহারা নাম লেখায়  তাদের ভাগ্যে অনিবার্য ফাঁকি!    জেনেও ভালোবেসেছিলাম তারে,  ধৈর্য ধরে বিরহ ভার স’বো;  দিনের আলোয় দেখাবো নিষ্প্রভ  জ্বলবো বলে রাতের অন্ধকারে।    আমায় তুমি যতোই ঠেলো দূরে  মহাকাশের নিয়ম কোথায় যাবে?  আমি ফিরে আসবো ঘুরে ঘুরে  গ্রহ হলে উপগ্রহে পাবে!    মাটি হলে পাবে শস্য- বীজে  বাতাস হলে পাবে আমায় ঝড়ে!  মৃত্যু হলে বুঝবে আমি কি যে,  ছিলেম তোমার সারাজীবন ধরে!   ======

আচল সৃতি- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Image
আমার হৃদয়ভূমি-মাঝখানে    জাগিয়া রয়েছে নিতি    অচল ধবল শৈল-সমান    একটি অচল স্মৃতি।    প্রতিদিন ঘিরি ঘিরি    সে নীরব হিমগিরি    আমার দিবস আমার রজনী    আসিছে যেতেছে ফিরি।       যেখানে চরণ রেখেছে সে মোর    মর্ম গভীরতম—    উন্নত শির রয়েছে তুলিয়া    সকল উচ্চে মম।    মোর কল্পনা শত    রঙিন মেঘের মতো    তাহারে ঘেরিয়া হাসিছে কাঁদিছে,    সোহাগে হতেছে নত।       আমার শ্যামল তরুলতাগুলি    ফুলপল্লবভারে    সরস কোমল বাহুবেষ্টনে    বাঁধিতে চাহিছে তারে।    শিখর গগনলীন    দুর্গম জনহীন,    বাসনাবিহগ একেলা সেথায়    ধাইছে রাত্রিদিন।       চারি দিকে তার কত আসা-যাওয়া,    কত গীত , কত কথা —    মাঝখানে শুধু ধ্যানের মতন    নিশ্চল নীরবতা।   ...

আমার মাঝে তোমার লীলা হবে -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Image
আমার মাঝে তোমার লীলা হবে,    তাই তো আমি এসেছি এই ভবে।    এই ঘরে সব খুলে যাবে দ্বার,    ঘুচে যাবে সকল অহংকার,    আনন্দময় তোমার এ সংসার    আমার কিছু আর বাকি না রবে।       মরে গিয়ে বাঁচব আমি, তবে    আমার মাঝে তোমার লীলা হবে।    সব বাসনা যাবে আমার থেমে    মিলে গিয়ে তোমারি এক প্রেমে,    দুঃখসুখের বিচিত্র জীবনে    তুমি ছাড়া আর কিছু না রবে।     ====== 

অক্ষমতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Image
অক্ষমতা এ যেন রে অভিশপ্ত প্রেতের পিপাসা —    সলিল রয়েছে প'ড়ে, শুধু দেহ নাই।    এ কেবল হৃদয়ের দুর্বল দুরাশা    সাধের বস্তুর মাঝে করে চাই - চাই।    দুটি চরণেতে বেঁধে ফুলের শৃঙ্খল    কেবল পথের পানে চেয়ে বসে থাকা!    মানবজীবন যেন সকলি নিষ্ফল —    বিশ্ব যেন চিত্রপট, আমি যেন আঁকা!    চিরদিন বুভুক্ষিত প্রাণহুতাশন    আমারে করিছে ছাই প্রতি পলে পলে,    মহত্ত্বের আশা শুধু ভারের মতন    আমারে ডুবায়ে দেয় জড়ত্বের তলে।    কোথা সংসারের কাজে জাগ্রত হৃদয়!    কোথা রে সাহস মোর অস্থিমজ্জাময়!     ====== 

১৪০০ সাল-রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর

Image
১৪০০ সাল আজি হতে শতবর্ষ পরে  কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি  কৌতুহলভরে,  আজি হতে শতবর্ষ পরে!  আজি নব বসন্তের প্রভাতের আনন্দের  লেশমাত্র ভাগ,  আজিকার কোনো ফুল, বিহঙ্গের কোনো গান,  আজিকার কোনো রক্তরাগ-  অনুরাগে সিক্ত করি পারিব কি পাঠাইতে  তোমাদের করে,  আজি হতে শতবর্ষ পরে?    তবু তুমি একবার খুলিয়া দক্ষিণদ্বার  বসি বাতায়নে  সুদূর দিগন্তে চাহি কল্পনায় অবগাহি  ভেবে দেখো মনে-  একদিন শতবর্ষ আগে  চঞ্চল পুলকরাশি কোন্ স্বর্গ হতে ভাসি  নিখিলের মর্মে আসি লাগে,  নবীন ফাল্গুনদিন সকল-বন্ধন-হীন  উন্মত্ত অধীর,  উড়ায়ে চঞ্চল পাখা পুষ্পরেণুগন্ধমাখা  দক্ষিণসমীর  সহসা আসিয়া ত্বরা রাঙায়ে দেয়েছে ধরা  যৌবনের রাগে,  তোমাদের শতবর্ষ আগে।  সেদিন উতলা প্রাণে, হৃদয় মগন গানে,  কবি একা জাগে-  কত কথা পুষ্প প্রায় বিকশি তুলিতে চায়  কত অনুরাগে,  একদিন শতবর্ষ আগে।    আজি হতে শতবর্ষ পরে  এখন করিছে গান সে কোন্ নুতন কবি  তো...

বাসর-হুমায়ুন আহমেদ

Image
বাসর কপাটহীন একটা অস্থির ঘরে তার সঙ্গে দেখা । লোহার তৈরি ছোট্ট একটা ঘর । বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে কোন যোগ নেই । ঘরটা শুধু উঠছে আর নামছে । নামছে আর উঠছে । মানুষ ক্লান্ত হয় – এ ঘরের কোন ক্লান্তি নেই। এ রকম একটা ঘরেই বোধহয় বেহুলার বাসর হয়েছিল । নিশ্ছিদ্র লোহার একটা ঘর । কোন সাপ সেখানে ঢুকতে পারবে না । হিস হিস করে বলতে পারবে না, পাপ করো। পৃথিবীর সব আনন্দ পাপে । পুণ্য আনন্দহীন । উল্লাসহীন । পুণ্য করবে আকাশের ফিরিশতারা । কারণ পুণ্য করার জন্যেই তাদের তৈরি করা হয়েছে । লোহার সেই ঘরে ঢোকার জন্য সাপটা পথ খুঁজছিলো । সেই ফাঁকে বেহুলা তাঁর স্বামীকে বললেন, কি হয়েছে, তুমি ঘামছ কেন ? আর তখন একটা সুতা সাপ ঢুকে গেলো। ফিসফিস করে কোন একটা পরামর্শ দিতে গেলো । বেহুলা সেই পরামর্শ শুনলেন না বলেই কি লখিন্দরকে মরতে হল ?     তার সঙ্গে আমার দেখা কপাটহীন একটা অস্থির ঘরে । ঘরটা শুধু ওঠে আর নামে । আমি তাকে বলতে গেলাম - আচ্ছা শুনুন, আপনার কি মনে হচ্ছে না এই ঘরটা আসলে আমাদের বাসর ঘর ? আপনি আর কেউ নন, আপনি বেহুলা । যেই আপনি ভালবেসে আমাকে কিছু বলতে যাবেন ওম্নি একটা সুতা সাপ এসে আমাক...

আশ্রু- হুমায়ুন আহমেদ

Image
আশ্রু আমার বন্ধুর বিয়ে উপহার বগলে নিয়ে আমি আর আতাহার, মৌচাক মোড়ে এসে বাস থেকে নামলাম দু’সেকেন্ড থামলাম।। টিপটিপ ঝিপঝিপ বৃষ্টি কি পড়ছে? আকাশের অশ্রু ফোঁটা ফোঁটা ঝরছে?     আমি আর আতাহার বলুন কি করি আর? উপহার বগলে নিয়ে আকাশের অশ্রু সারা গায়ে মাখলাম।। হি হি করে হাসলাম।।   ======