Posts

Showing posts from 2018

আসমানী প্রেম -নির্মলেন্দু গুন

নেই তবু যা আছের মতো দেখায়  আমরা তাকে আকাশ বলে ডাকি,  সেই আকাশে যাহারা নাম লেখায়  তাদের ভাগ্যে অনিবার্য ফাঁকি!    জেনেও ভালোবেসেছিলাম তারে,  ধৈর্য ধরে বিরহ ভার স’বো;  দিনের আলোয় দেখাবো নিষ্প্রভ  জ্বলবো বলে রাতের অন্ধকারে।    আমায় তুমি যতোই ঠেলো দূরে  মহাকাশের নিয়ম কোথায় যাবে?  আমি ফিরে আসবো ঘুরে ঘুরে  গ্রহ হলে উপগ্রহে পাবে!    মাটি হলে পাবে শস্য- বীজে  বাতাস হলে পাবে আমায় ঝড়ে!  মৃত্যু হলে বুঝবে আমি কি যে,  ছিলেম তোমার সারাজীবন ধরে!   ======

আচল সৃতি- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Image
আমার হৃদয়ভূমি-মাঝখানে    জাগিয়া রয়েছে নিতি    অচল ধবল শৈল-সমান    একটি অচল স্মৃতি।    প্রতিদিন ঘিরি ঘিরি    সে নীরব হিমগিরি    আমার দিবস আমার রজনী    আসিছে যেতেছে ফিরি।       যেখানে চরণ রেখেছে সে মোর    মর্ম গভীরতম—    উন্নত শির রয়েছে তুলিয়া    সকল উচ্চে মম।    মোর কল্পনা শত    রঙিন মেঘের মতো    তাহারে ঘেরিয়া হাসিছে কাঁদিছে,    সোহাগে হতেছে নত।       আমার শ্যামল তরুলতাগুলি    ফুলপল্লবভারে    সরস কোমল বাহুবেষ্টনে    বাঁধিতে চাহিছে তারে।    শিখর গগনলীন    দুর্গম জনহীন,    বাসনাবিহগ একেলা সেথায়    ধাইছে রাত্রিদিন।       চারি দিকে তার কত আসা-যাওয়া,    কত গীত , কত কথা —    মাঝখানে শুধু ধ্যানের মতন    নিশ্চল নীরবতা।   ...

আমার মাঝে তোমার লীলা হবে -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Image
আমার মাঝে তোমার লীলা হবে,    তাই তো আমি এসেছি এই ভবে।    এই ঘরে সব খুলে যাবে দ্বার,    ঘুচে যাবে সকল অহংকার,    আনন্দময় তোমার এ সংসার    আমার কিছু আর বাকি না রবে।       মরে গিয়ে বাঁচব আমি, তবে    আমার মাঝে তোমার লীলা হবে।    সব বাসনা যাবে আমার থেমে    মিলে গিয়ে তোমারি এক প্রেমে,    দুঃখসুখের বিচিত্র জীবনে    তুমি ছাড়া আর কিছু না রবে।     ====== 

অক্ষমতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Image
অক্ষমতা এ যেন রে অভিশপ্ত প্রেতের পিপাসা —    সলিল রয়েছে প'ড়ে, শুধু দেহ নাই।    এ কেবল হৃদয়ের দুর্বল দুরাশা    সাধের বস্তুর মাঝে করে চাই - চাই।    দুটি চরণেতে বেঁধে ফুলের শৃঙ্খল    কেবল পথের পানে চেয়ে বসে থাকা!    মানবজীবন যেন সকলি নিষ্ফল —    বিশ্ব যেন চিত্রপট, আমি যেন আঁকা!    চিরদিন বুভুক্ষিত প্রাণহুতাশন    আমারে করিছে ছাই প্রতি পলে পলে,    মহত্ত্বের আশা শুধু ভারের মতন    আমারে ডুবায়ে দেয় জড়ত্বের তলে।    কোথা সংসারের কাজে জাগ্রত হৃদয়!    কোথা রে সাহস মোর অস্থিমজ্জাময়!     ====== 

১৪০০ সাল-রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর

Image
১৪০০ সাল আজি হতে শতবর্ষ পরে  কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি  কৌতুহলভরে,  আজি হতে শতবর্ষ পরে!  আজি নব বসন্তের প্রভাতের আনন্দের  লেশমাত্র ভাগ,  আজিকার কোনো ফুল, বিহঙ্গের কোনো গান,  আজিকার কোনো রক্তরাগ-  অনুরাগে সিক্ত করি পারিব কি পাঠাইতে  তোমাদের করে,  আজি হতে শতবর্ষ পরে?    তবু তুমি একবার খুলিয়া দক্ষিণদ্বার  বসি বাতায়নে  সুদূর দিগন্তে চাহি কল্পনায় অবগাহি  ভেবে দেখো মনে-  একদিন শতবর্ষ আগে  চঞ্চল পুলকরাশি কোন্ স্বর্গ হতে ভাসি  নিখিলের মর্মে আসি লাগে,  নবীন ফাল্গুনদিন সকল-বন্ধন-হীন  উন্মত্ত অধীর,  উড়ায়ে চঞ্চল পাখা পুষ্পরেণুগন্ধমাখা  দক্ষিণসমীর  সহসা আসিয়া ত্বরা রাঙায়ে দেয়েছে ধরা  যৌবনের রাগে,  তোমাদের শতবর্ষ আগে।  সেদিন উতলা প্রাণে, হৃদয় মগন গানে,  কবি একা জাগে-  কত কথা পুষ্প প্রায় বিকশি তুলিতে চায়  কত অনুরাগে,  একদিন শতবর্ষ আগে।    আজি হতে শতবর্ষ পরে  এখন করিছে গান সে কোন্ নুতন কবি  তো...

বাসর-হুমায়ুন আহমেদ

Image
বাসর কপাটহীন একটা অস্থির ঘরে তার সঙ্গে দেখা । লোহার তৈরি ছোট্ট একটা ঘর । বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে কোন যোগ নেই । ঘরটা শুধু উঠছে আর নামছে । নামছে আর উঠছে । মানুষ ক্লান্ত হয় – এ ঘরের কোন ক্লান্তি নেই। এ রকম একটা ঘরেই বোধহয় বেহুলার বাসর হয়েছিল । নিশ্ছিদ্র লোহার একটা ঘর । কোন সাপ সেখানে ঢুকতে পারবে না । হিস হিস করে বলতে পারবে না, পাপ করো। পৃথিবীর সব আনন্দ পাপে । পুণ্য আনন্দহীন । উল্লাসহীন । পুণ্য করবে আকাশের ফিরিশতারা । কারণ পুণ্য করার জন্যেই তাদের তৈরি করা হয়েছে । লোহার সেই ঘরে ঢোকার জন্য সাপটা পথ খুঁজছিলো । সেই ফাঁকে বেহুলা তাঁর স্বামীকে বললেন, কি হয়েছে, তুমি ঘামছ কেন ? আর তখন একটা সুতা সাপ ঢুকে গেলো। ফিসফিস করে কোন একটা পরামর্শ দিতে গেলো । বেহুলা সেই পরামর্শ শুনলেন না বলেই কি লখিন্দরকে মরতে হল ?     তার সঙ্গে আমার দেখা কপাটহীন একটা অস্থির ঘরে । ঘরটা শুধু ওঠে আর নামে । আমি তাকে বলতে গেলাম - আচ্ছা শুনুন, আপনার কি মনে হচ্ছে না এই ঘরটা আসলে আমাদের বাসর ঘর ? আপনি আর কেউ নন, আপনি বেহুলা । যেই আপনি ভালবেসে আমাকে কিছু বলতে যাবেন ওম্নি একটা সুতা সাপ এসে আমাক...

আশ্রু- হুমায়ুন আহমেদ

Image
আশ্রু আমার বন্ধুর বিয়ে উপহার বগলে নিয়ে আমি আর আতাহার, মৌচাক মোড়ে এসে বাস থেকে নামলাম দু’সেকেন্ড থামলাম।। টিপটিপ ঝিপঝিপ বৃষ্টি কি পড়ছে? আকাশের অশ্রু ফোঁটা ফোঁটা ঝরছে?     আমি আর আতাহার বলুন কি করি আর? উপহার বগলে নিয়ে আকাশের অশ্রু সারা গায়ে মাখলাম।। হি হি করে হাসলাম।।   ======

তিনি -হুমায়ুন আহমেদ

Image
তিনি এক জরাগ্রস্থ বৃদ্ধ ছিলেন নিজ মনে আপন ভুবনে। জরার কারণে তিনি পুরোপুরি বৃক্ষ এক। বাতাসে বৃক্ষের পাতা কাঁপে তাঁর কাঁপে হাতের আঙ্গুল। বৃদ্ধের সহযাত্রী জবুথবু- পা নেই,শুধু পায়ের স্মৃতি পড়ে আছে। সেই স্মৃতি ঢাকা থাকে খয়েরি চাদরে। জরাগ্রস্থ বৃদ্ধ ভাবে চাদরের রঙটা নীল হলে ভাল ছিল। স্মৃতির রং সব সময় নীল।   ======

কাচপোকা-হুমায়ুন আহমেদ

Image
কাচপোকা একটা ঝকঝকে রঙিন কাচপোকা হাঁটতে হাঁটতে এক ঝলক রোদের মধ্যে পড়ে গেল। ঝিকমিকিয়ে উঠল তার নকশাকাটা লাল নীল সবুজ শরীর। বিরক্ত হয়ে বলল,রোদ কেন? আমি চাই অন্ধকার ।চির অন্ধকার আমার ষোলটা পায়ে একটা ভারি শরীর বয়ে নিয়ে যাচ্ছি- অন্ধকার দেখব বলে। আমি চাই অন্ধকার ।চির অন্ধকার একটা সময়ে এসে রোদ নিভে গেল বাদুড়ে ডানায় ভর করে নামল আঁধার। কি গাঢ়,পিচ্ছিল থকথকে অন্ধকার ! কাচপোকার ষোলটা ক্লান্ত পা বার বার সেই পিচ্ছিল আঠালো অন্ধকারে ডেবে যাচ্ছিল। তার খুব কষ্ট হচ্ছিল হাঁটতে তবু সে হাঁটছে- তাকে যেতে হবে আরও গভীর অন্ধকারে। যে অন্ধকার-আলোর জন্মদাত্রী।   ======

বাবার চিঠি-হুমায়ুন আহমেদ

Image
বাবার চিঠি আমি যাচ্ছি নাখালপাড়ায়। আমার বৃদ্ধ পিতা আমাকে পাঠাচ্ছেন তাঁর প্রথম প্রেমিকার কাছে। আমার প্যান্টের পকেটে সাদা খামে মোড়া বাবার লেখা দীর্ঘ পত্র। খুব যত্নে খামের উপর তিনি তাঁর প্রণয়িনীর নাম লিখেছেন। কে জানে চিঠিতে কি লেখা - ? তাঁর শরীরের সাম্প্রতিক অবস্থার বিস্তারিত বর্ণনা ? রাতে ঘুম হচ্ছেনা, রক্তে সুগার বেড়ে গেছে কষ্ট পাচ্ছেন হাঁপানিতে - এইসব হাবিজাবি। প্রেমিকার কাছে লেখা চিঠি বয়সের ভারে প্রসঙ্গ পাল্টায় অন্য রকম হয়ে যায়। সেখানে জোছনার কথা থাকে না, সাম্প্রতিক শ্বাসকষ্ট বড় হয়ে উঠে। প্রেমিকাও একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর রোগভুগের কথা পড়তে ভালবাসেন। চিঠি পড়তে পড়তে দরদে গলিত হন – আহা, বেচারা ইদানিং বড্ড কষ্ট পাচ্ছে তো ...   ======

গানের আড়াল কাজী নজরুল ইসলাম

Image
গানের আড়াল তোমার কন্ঠে রাখিয়া এসেছি মোর কন্ঠের গান --    এইটুকু শুধু রবে পরিচয় ? আর সব অবসান ?    অন্তরতলে অন্তরতর যে ব্যথা লুকায়ে রয়,    গানের আড়ালে পাও নাই তার কোনদিন পরিচয় ?        হয়তো কেবলি গাহিয়াছি গান, হয়ত কহিনি কথা,    গানের বানী সে শুধু কি বিলাস, মিছে তার আকুলতা ?    হৃদয়ে কখন জাগিল জোয়ার, তাহারি প্রতিধ্বনি    কন্ঠের তটে উঠেছে আমার অহরহ রণরণি' --    উপকূলে ব'সে শুনেছ সে সুর, বোঝ নাই তার মানে ?    বেঁধেনি হৃদয়ে সে সুর, দুলেছে দু'ল হয়ে শুধু কানে ?        হায় ভেবে নাহি পাই --    যে - চাঁদ জাগালো সাগরে জোয়ার, সেই চাঁদই শোনে নাই ।    সাগরের সেই ফুলে ফুলে কাদা কূলে কূলে নিশিদিন ?    সুরেরে আড়ালে মূর্চ্ছনা কাঁদে, শোনে নাই তাহা বীণ ?    আমার গানের মালার সুবাস ছুঁল না হৃদয়ে আসি' ?    আমার বুকের বাণী হল শুধু তব কন্ঠের ফাঁসি?        বন্ধু গো যেয়ো...

পথ হারা - কাজী নজরুল ইসলাম

Image
পথ হারা পথ হারাবেলা শেষে উদাস পথিক ভাবে, সে যেন কোন অনেক দূরে যাবে – উদাস পথিক ভাবে।     ‘ঘরে এস’ সন্ধ্যা সবায় ডাকে, ‘নয় তোরে নয়’ বলে একা তাকে; পথের পথিক পথেই বসে থাকে, জানে না সে কে তাহারে চাবে। উদাস পথিক ভাবে।    বনের ছায়া গভীর ভালোবেসে আঁধার মাথায় দিগবধূদের কেশে, ডাকতে বুঝি শ্যামল মেঘের দেশে শৈলমূলে শৈলবালা নাবে – উদাস পথিক ভাবে।    বাতি আনি রাতি আনার প্রীতি, বধূর বুকে গোপন সুখের ভীতি, বিজন ঘরে এখন সে গায় গীতি, একলা থাকার গানখানি সে গাবে- উদাস পথিক ভাবে।    হঠাৎ তাহার পথের রেখা হারায় গহন বাঁধায় আঁধার-বাঁধা কারায়, পথ-চাওয়া তার কাঁদে তারায় তারায় আর কি পূবের পথের দেখা পাবে উদাস পথিক ভাবে।   ======

বিদায় বেলায় -কাজী নজরুল ইসলাম

Image
বিদায় বেলায় কাজী নজরুল ইসলাম গাহি সাম্যের গান- মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান, নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি, সব দেশে, সল কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি। ‘পূজারী, দুয়ার খোল, ক্ষুদার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজার সময় হলো!’ স্বপ্ন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয় দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা হ’য়ে যাবে নিশ্চয়! জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুদায় কন্ঠ ক্ষীণ ডাকিল পান্থ, ‘দ্বার খোল বাবা, খাইনি তো সাত দিন!’ সহসা বন্ধ হ’ল মন্দির, ভুখারী ফিরিয়া চলে, তিমির রাত্রি, পথ জুড়ে তার ক্ষুদার মানিক জ্বলে! ভুখারী ফুকারি’ কয়, ‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!’  মসজিদে কাল শিরনী আছিল, অঢেল গোস্ত রুটি বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটিকুটি! এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে-আজারির চিন্ বলে ‘বাবা, আমি ভুকা ফাকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন!’ তেরিয়াঁ হইয়া হাঁকিল মোল্লা – ভ্যালা হ’ল দেখি লেঠা, ভুখা আছ মর গো-ভাগাড়ে গিয়ে! নামাজ পড়িস বেটা? ভুখারী কহিল, ‘না বাবা!’ মোল্লা হাঁকিল – তা’ হলে শালা সোজা পথ দেখ!’ গোস্ত-রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা! ভুখারী ফিরিয়া চলে, চলিতে চলিতে বলে- আ...

মানুষ -কাজী নজরুল ইসলাম

Image
মানুষ কাজী নজরুল ইসলাম গাহি সাম্যের গান- মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান, নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি, সব দেশে, সল কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি। ‘পূজারী, দুয়ার খোল, ক্ষুদার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজার সময় হলো!’ স্বপ্ন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয় দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা হ’য়ে যাবে নিশ্চয়! জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুদায় কন্ঠ ক্ষীণ ডাকিল পান্থ, ‘দ্বার খোল বাবা, খাইনি তো সাত দিন!’ সহসা বন্ধ হ’ল মন্দির, ভুখারী ফিরিয়া চলে, তিমির রাত্রি, পথ জুড়ে তার ক্ষুদার মানিক জ্বলে! ভুখারী ফুকারি’ কয়, ‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!’    মসজিদে কাল শিরনী আছিল, অঢেল গোস্ত রুটি বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটিকুটি! এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে-আজারির চিন্ বলে ‘বাবা, আমি ভুকা ফাকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন!’ তেরিয়াঁ হইয়া হাঁকিল মোল্লা – ভ্যালা হ’ল দেখি লেঠা, ভুখা আছ মর গো-ভাগাড়ে গিয়ে! নামাজ পড়িস বেটা? ভুখারী কহিল, ‘না বাবা!’ মোল্লা হাঁকিল – তা’ হলে শালা সোজা পথ দেখ!’ গোস্ত-রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা! ভুখারী ফিরিয়া চলে, চলিতে চলিতে বলে- ...

শিশুর পণ --গোলাম মস্তুফা

Image
এই করিনু পণ   মোরা এই করিনু পণ   ফুলের মতো গড়ব মোরা   মোদের এই জীবন।   হাসব মোরা সহজ সুখে   গন্ধ রবে লুকিয়ে বুকে   মোদের কাছে এলে সবার   জুড়িয়ে যাবে মন।  নদী যেমন দুই কূলে তার   বিলিয়ে চলে জল,   ফুটিয়ে তোলে সবার তরে   শস্য, ফুল ও ফল।   তেমনি করে মোরাও সবে   পরের ভাল করব ভবে   মোদের সেবায় উঠবে হেসে   এই ধরণীতল।   সূর্য যেমন নিখিল ধরায়   করে কিরণ দান,   আঁধার দূরে যায় পালিয়ে   জাগে পাখির গান।   তেমনি মোদের জ্ঞানের আলো   দূর করিবে সকল কালো   উঠবে জেগে ঘুমিয়ে আছে   যে সব নীরব প্রাণ। 

বঙ্গবীর --মাইকেল মদুসূদন দত্ত

Image
রেখো মা দাসেরে মনে, এ মিনতি করি পদে    সাধিতে মনের সাধ,    ঘটে যদি পরমাদ,    মধুহীন করো না গো তব মনঃকোকনদে।    প্রবাসে দৈবের বশে,    জীব-তারা যদি খসে    এ দেহ-আকাশ হতে, – খেদ নাহি তাহে।    জন্মিলে মরিতে হবে,    অমর কে কোথা কবে,    চিরস্থির কবে নীর, হায় রে, জীবন-নদে?    কিন্তু যদি রাখ মনে,    নাহি, মা, ডরি শমনে;    মক্ষিকাও গলে না গো, পড়িলে অমৃত-হ্রদে!    সেই ধন্য নরকুলে,    লোকে যারে নাহি ভুলে,    মনের মন্দিরে সদা সেবে সর্ব্বজন; –    কিন্তু কোন্ গুণ আছে,    যাচিব যে তব কাছে,    হেন অমরতা আমি, কহ, গো, শ্যামা জন্মদে!    তবে যদি দয়া কর,    ভুল দোষ, গুণ ধর,    অমর করিয়া বর দেহ দাসে, সুবরদে! –    ফুটি যেন স্মৃতি-জলে,    মানসে, মা, যথা ফলে    মধুময় তামরস কি বসন্ত, কি শরদে!      =====...

কবর -- জসীম উদ্দিন

Image
এই খানে তোর দাদির কবর ডালিম-গাছের তলে,  তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।  এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,  পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।  এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা,  সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা!  সোনালি ঊষার সোনামুখ তার আমার নয়নে ভরি  লাঙল লইয়া খেতে ছুটিলাম গাঁয়ের ও-পথ ধরি।  যাইবার কালে ফিরে ফিরে তারে দেখে লইতাম কত  এ কথা লইয়া ভাবি-সাব মোরে তামাশা করিত শত।  এমনি করিয়া জানি না কখন জীবনের সাথে মিশে  ছোট-খাট তার হাসি ব্যথা মাঝে হারা হয়ে গেনু দিশে।    বাপের বাড়িতে যাইবার কাল কহিত ধরিয়া পা  আমারে দেখিতে যাইও কিন্তু উজান-তলীর গাঁ।  শাপলার হাটে তরমুজ বেচি পয়সা করি দেড়ী,  পুঁতির মালার একছড়া নিতে কখনও হত না দেরি।  দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন লইয়া গাঁটে,  সন্ধাবেলায় ছুটে যাইতাম শ্বশুরবাড়ির বাটে!  হেস না¬ হেস না¬ শোন দাদু, সেই তামাক মাজন পেয়ে,  দাদি যে তোমার কত খুশি হত দেখিতিস যদি চেয়ে!  নথ নেড়ে নেড়ে কহিত হাসি...

অনন্ত প্রেম-- রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর

Image
অনন্ত প্রেম তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি    শত রূপে শত বার    জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।    চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়    গাঁথিয়াছে গীতহার,    কত রূপ ধরে পরেছ গলায়,    নিয়েছ সে উপহার    জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।       যত শুনি সেই অতীত কাহিনী,    প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,    অতি পুরাতন বিরহমিলনকথা,    অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে    দেখা দেয় অবশেষে    কালের তিমিররজনী ভেদিয়া    তোমারি মুরতি এসে,    চিরস্মৃতিময়ী ধ্রুবতারকার বেশে।       আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি    যুগল প্রেমের স্রোতে    অনাদিকালের হৃদয়-উৎস হতে।    আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা    কোটি প্রেমিকের মাঝে    বিরহবিধুর নয়নসলিলে,    মিলনমধুর লাজে—    পুরাতন প্রেম নিত্যনূতন সাজে।       আজি সেই চিরদিবসের প্রেম    অবসান লভিয়াছে ...

বিদ্রোহী

Image
বিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলাম বল বীর – বল উন্নত মম শির! শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির! বল বীর – বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’ চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি’ ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া, উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর! মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর! বল বীর – আমি চির উন্নত শির!  আমি চিরদূর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস, মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস! আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর, আমি দুর্বার, আমি ভেঙে করি সব চুরমার! আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল, আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল! আমি মানি না কো কোন আইন, আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন! আমি ধূর্জটি, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব-বিধাতৃর! বল বীর – চির-উন্নত মম শির!  আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে...

নিঃসঙ্গতা

নিঃসঙ্গতা  – আবুল হাসান অতটুকু চায়নি বালিকা! অত শোভা, অত স্বাধীনতা! চেয়েছিল আরো কিছু কম, আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিল মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক! অতটুকু চায়নি বালিকা! অত হৈ রৈ লোক, অত ভীড়, অত সমাগম! চেয়েছিল আরো কিছু কম! একটি জলের খনি তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিল একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী।।