Posts

Showing posts from March, 2018

পথ হারা - কাজী নজরুল ইসলাম

Image
পথ হারা পথ হারাবেলা শেষে উদাস পথিক ভাবে, সে যেন কোন অনেক দূরে যাবে – উদাস পথিক ভাবে।     ‘ঘরে এস’ সন্ধ্যা সবায় ডাকে, ‘নয় তোরে নয়’ বলে একা তাকে; পথের পথিক পথেই বসে থাকে, জানে না সে কে তাহারে চাবে। উদাস পথিক ভাবে।    বনের ছায়া গভীর ভালোবেসে আঁধার মাথায় দিগবধূদের কেশে, ডাকতে বুঝি শ্যামল মেঘের দেশে শৈলমূলে শৈলবালা নাবে – উদাস পথিক ভাবে।    বাতি আনি রাতি আনার প্রীতি, বধূর বুকে গোপন সুখের ভীতি, বিজন ঘরে এখন সে গায় গীতি, একলা থাকার গানখানি সে গাবে- উদাস পথিক ভাবে।    হঠাৎ তাহার পথের রেখা হারায় গহন বাঁধায় আঁধার-বাঁধা কারায়, পথ-চাওয়া তার কাঁদে তারায় তারায় আর কি পূবের পথের দেখা পাবে উদাস পথিক ভাবে।   ======

বিদায় বেলায় -কাজী নজরুল ইসলাম

Image
বিদায় বেলায় কাজী নজরুল ইসলাম গাহি সাম্যের গান- মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান, নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি, সব দেশে, সল কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি। ‘পূজারী, দুয়ার খোল, ক্ষুদার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজার সময় হলো!’ স্বপ্ন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয় দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা হ’য়ে যাবে নিশ্চয়! জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুদায় কন্ঠ ক্ষীণ ডাকিল পান্থ, ‘দ্বার খোল বাবা, খাইনি তো সাত দিন!’ সহসা বন্ধ হ’ল মন্দির, ভুখারী ফিরিয়া চলে, তিমির রাত্রি, পথ জুড়ে তার ক্ষুদার মানিক জ্বলে! ভুখারী ফুকারি’ কয়, ‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!’  মসজিদে কাল শিরনী আছিল, অঢেল গোস্ত রুটি বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটিকুটি! এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে-আজারির চিন্ বলে ‘বাবা, আমি ভুকা ফাকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন!’ তেরিয়াঁ হইয়া হাঁকিল মোল্লা – ভ্যালা হ’ল দেখি লেঠা, ভুখা আছ মর গো-ভাগাড়ে গিয়ে! নামাজ পড়িস বেটা? ভুখারী কহিল, ‘না বাবা!’ মোল্লা হাঁকিল – তা’ হলে শালা সোজা পথ দেখ!’ গোস্ত-রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা! ভুখারী ফিরিয়া চলে, চলিতে চলিতে বলে- আ...

মানুষ -কাজী নজরুল ইসলাম

Image
মানুষ কাজী নজরুল ইসলাম গাহি সাম্যের গান- মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান, নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি, সব দেশে, সল কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি। ‘পূজারী, দুয়ার খোল, ক্ষুদার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজার সময় হলো!’ স্বপ্ন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয় দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা হ’য়ে যাবে নিশ্চয়! জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুদায় কন্ঠ ক্ষীণ ডাকিল পান্থ, ‘দ্বার খোল বাবা, খাইনি তো সাত দিন!’ সহসা বন্ধ হ’ল মন্দির, ভুখারী ফিরিয়া চলে, তিমির রাত্রি, পথ জুড়ে তার ক্ষুদার মানিক জ্বলে! ভুখারী ফুকারি’ কয়, ‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!’    মসজিদে কাল শিরনী আছিল, অঢেল গোস্ত রুটি বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটিকুটি! এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে-আজারির চিন্ বলে ‘বাবা, আমি ভুকা ফাকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন!’ তেরিয়াঁ হইয়া হাঁকিল মোল্লা – ভ্যালা হ’ল দেখি লেঠা, ভুখা আছ মর গো-ভাগাড়ে গিয়ে! নামাজ পড়িস বেটা? ভুখারী কহিল, ‘না বাবা!’ মোল্লা হাঁকিল – তা’ হলে শালা সোজা পথ দেখ!’ গোস্ত-রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা! ভুখারী ফিরিয়া চলে, চলিতে চলিতে বলে- ...

শিশুর পণ --গোলাম মস্তুফা

Image
এই করিনু পণ   মোরা এই করিনু পণ   ফুলের মতো গড়ব মোরা   মোদের এই জীবন।   হাসব মোরা সহজ সুখে   গন্ধ রবে লুকিয়ে বুকে   মোদের কাছে এলে সবার   জুড়িয়ে যাবে মন।  নদী যেমন দুই কূলে তার   বিলিয়ে চলে জল,   ফুটিয়ে তোলে সবার তরে   শস্য, ফুল ও ফল।   তেমনি করে মোরাও সবে   পরের ভাল করব ভবে   মোদের সেবায় উঠবে হেসে   এই ধরণীতল।   সূর্য যেমন নিখিল ধরায়   করে কিরণ দান,   আঁধার দূরে যায় পালিয়ে   জাগে পাখির গান।   তেমনি মোদের জ্ঞানের আলো   দূর করিবে সকল কালো   উঠবে জেগে ঘুমিয়ে আছে   যে সব নীরব প্রাণ। 

বঙ্গবীর --মাইকেল মদুসূদন দত্ত

Image
রেখো মা দাসেরে মনে, এ মিনতি করি পদে    সাধিতে মনের সাধ,    ঘটে যদি পরমাদ,    মধুহীন করো না গো তব মনঃকোকনদে।    প্রবাসে দৈবের বশে,    জীব-তারা যদি খসে    এ দেহ-আকাশ হতে, – খেদ নাহি তাহে।    জন্মিলে মরিতে হবে,    অমর কে কোথা কবে,    চিরস্থির কবে নীর, হায় রে, জীবন-নদে?    কিন্তু যদি রাখ মনে,    নাহি, মা, ডরি শমনে;    মক্ষিকাও গলে না গো, পড়িলে অমৃত-হ্রদে!    সেই ধন্য নরকুলে,    লোকে যারে নাহি ভুলে,    মনের মন্দিরে সদা সেবে সর্ব্বজন; –    কিন্তু কোন্ গুণ আছে,    যাচিব যে তব কাছে,    হেন অমরতা আমি, কহ, গো, শ্যামা জন্মদে!    তবে যদি দয়া কর,    ভুল দোষ, গুণ ধর,    অমর করিয়া বর দেহ দাসে, সুবরদে! –    ফুটি যেন স্মৃতি-জলে,    মানসে, মা, যথা ফলে    মধুময় তামরস কি বসন্ত, কি শরদে!      =====...

কবর -- জসীম উদ্দিন

Image
এই খানে তোর দাদির কবর ডালিম-গাছের তলে,  তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।  এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,  পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।  এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা,  সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা!  সোনালি ঊষার সোনামুখ তার আমার নয়নে ভরি  লাঙল লইয়া খেতে ছুটিলাম গাঁয়ের ও-পথ ধরি।  যাইবার কালে ফিরে ফিরে তারে দেখে লইতাম কত  এ কথা লইয়া ভাবি-সাব মোরে তামাশা করিত শত।  এমনি করিয়া জানি না কখন জীবনের সাথে মিশে  ছোট-খাট তার হাসি ব্যথা মাঝে হারা হয়ে গেনু দিশে।    বাপের বাড়িতে যাইবার কাল কহিত ধরিয়া পা  আমারে দেখিতে যাইও কিন্তু উজান-তলীর গাঁ।  শাপলার হাটে তরমুজ বেচি পয়সা করি দেড়ী,  পুঁতির মালার একছড়া নিতে কখনও হত না দেরি।  দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন লইয়া গাঁটে,  সন্ধাবেলায় ছুটে যাইতাম শ্বশুরবাড়ির বাটে!  হেস না¬ হেস না¬ শোন দাদু, সেই তামাক মাজন পেয়ে,  দাদি যে তোমার কত খুশি হত দেখিতিস যদি চেয়ে!  নথ নেড়ে নেড়ে কহিত হাসি...

অনন্ত প্রেম-- রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর

Image
অনন্ত প্রেম তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি    শত রূপে শত বার    জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।    চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়    গাঁথিয়াছে গীতহার,    কত রূপ ধরে পরেছ গলায়,    নিয়েছ সে উপহার    জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।       যত শুনি সেই অতীত কাহিনী,    প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,    অতি পুরাতন বিরহমিলনকথা,    অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে    দেখা দেয় অবশেষে    কালের তিমিররজনী ভেদিয়া    তোমারি মুরতি এসে,    চিরস্মৃতিময়ী ধ্রুবতারকার বেশে।       আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি    যুগল প্রেমের স্রোতে    অনাদিকালের হৃদয়-উৎস হতে।    আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা    কোটি প্রেমিকের মাঝে    বিরহবিধুর নয়নসলিলে,    মিলনমধুর লাজে—    পুরাতন প্রেম নিত্যনূতন সাজে।       আজি সেই চিরদিবসের প্রেম    অবসান লভিয়াছে ...

বিদ্রোহী

Image
বিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলাম বল বীর – বল উন্নত মম শির! শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির! বল বীর – বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’ চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি’ ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া, উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর! মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর! বল বীর – আমি চির উন্নত শির!  আমি চিরদূর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস, মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস! আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর, আমি দুর্বার, আমি ভেঙে করি সব চুরমার! আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল, আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল! আমি মানি না কো কোন আইন, আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন! আমি ধূর্জটি, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব-বিধাতৃর! বল বীর – চির-উন্নত মম শির!  আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে...

নিঃসঙ্গতা

নিঃসঙ্গতা  – আবুল হাসান অতটুকু চায়নি বালিকা! অত শোভা, অত স্বাধীনতা! চেয়েছিল আরো কিছু কম, আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিল মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক! অতটুকু চায়নি বালিকা! অত হৈ রৈ লোক, অত ভীড়, অত সমাগম! চেয়েছিল আরো কিছু কম! একটি জলের খনি তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিল একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী।।