গানের আড়াল কাজী নজরুল ইসলাম
গানের আড়াল তোমার কন্ঠে রাখিয়া এসেছি মোর কন্ঠের গান -- এইটুকু শুধু রবে পরিচয় ? আর সব অবসান ? অন্তরতলে অন্তরতর যে ব্যথা লুকায়ে রয়, গানের আড়ালে পাও নাই তার কোনদিন পরিচয় ? হয়তো কেবলি গাহিয়াছি গান, হয়ত কহিনি কথা, গানের বানী সে শুধু কি বিলাস, মিছে তার আকুলতা ? হৃদয়ে কখন জাগিল জোয়ার, তাহারি প্রতিধ্বনি কন্ঠের তটে উঠেছে আমার অহরহ রণরণি' -- উপকূলে ব'সে শুনেছ সে সুর, বোঝ নাই তার মানে ? বেঁধেনি হৃদয়ে সে সুর, দুলেছে দু'ল হয়ে শুধু কানে ? হায় ভেবে নাহি পাই -- যে - চাঁদ জাগালো সাগরে জোয়ার, সেই চাঁদই শোনে নাই । সাগরের সেই ফুলে ফুলে কাদা কূলে কূলে নিশিদিন ? সুরেরে আড়ালে মূর্চ্ছনা কাঁদে, শোনে নাই তাহা বীণ ? আমার গানের মালার সুবাস ছুঁল না হৃদয়ে আসি' ? আমার বুকের বাণী হল শুধু তব কন্ঠের ফাঁসি? বন্ধু গো যেয়ো...
আমরা নিজেরাই নিজেদের শত্রু......... মণি খান Monie Khan
ReplyDelete#সমাজের #রন্ধ্রে #রন্ধ্রে #পচন !
তারা মানুষের ঘরে জন্মেছে ঠিক ই , কিন্তু তারা স্কুল, কলেজে গিয়ে লেখাপড়া শেখার সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত, কেউ কেউ বড় হয়েছে হতদরিদ্র পরিবারে কিম্বা বস্তিতে, অমানবিক এবং অসুস্থকর পরিবেশে। এরপর জীবন সংগ্রামে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে খুব অল্প বয়সে। তাদের নেই কোন পারিবারিক বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যেখান থেকে মানুষ পরিচিত হয় সামাজিক মূল্যবোধ, রুচিবোধ, দৃষ্টিভঙ্গী, মানবতা ইত্যাদির সাথে।
কোন রকম প্রফেশনাল ট্রেনিং ছাড়াই, তাদের হাতে দেওয়া হয়েছে অনেক বড় দ্বায়িত্ব। কেউ হয়েছে বাসের ড্রাইভার, কেউ ট্রাক ড্রাইভার কেউ বা হেল্পার।
তাদের উপর এতগুলো মানুষের জীবনের দ্বায়িত্ব থাকে কিন্তু তাদেরকে কীটপতঙ্গ মনে করা হয়।
সেই কীটপতঙ্গ যখন সুযোগ পায় তখন একটা নির্দোষ মানুষকে তারা গনধর্ষণ করে, ঘাড় মটকে মানুষটাকে খুন করে। পশুত্বের কাছে যখন মনুষ্যত্ব হেরে যায় সেই মানুষগুলো তখন পশুতেই পরিনত হয়।
এর জন্য অনেকটা দ্বায়ভার রয়েছে সেই সমাজ ব্যবস্থার। প্রত্যেক পেশার মানুষের প্রতি সবার শ্রদ্ধা থাকা উচিত এবং সেই শিক্ষাটা ছোটবেলা থেকেই দেওয়া উচিত। হোক সে বাড়ির কাজের মেয়ে, ড্রাইভার, বাবুর্চি, অফিসের পিয়ন বা সৈনিক।
আমি মাঝে মাঝে ভাবি কেমন সমাজে আমাদের বসবাস? যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার / আমার পরিবাবের সদস্যবর্গ নিরাপদে আছে ততক্ষণ কি আমাদের প্রতিবাদের কোন প্রয়োজন নেই?
সবকিছু দেখে আপনার কি আশেপাশের সবাইকে ঘৃণা করতে ইচ্ছে করছে? কিন্তু, না, এটা কোন সমাধান নয়।
মানুষ সামাজিক জীব, তাই যে কোন কাজ দলবদ্ধভাবে করতে তারা পছন্দ করে। যেমন ধরুন, একসাথে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া, একসাথে পিকনিকে যাওয়া, একসাথে ভ্রমন করতে যাওয়া, একসাথে ড্রাগ খাওয়া, নেশা করা, একসাথে একটা জীবন্ত পশুকে বধ করে হত্যা করা, রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেওয়া, একসাথে চলন্ত বাসে একটি মেয়েকে ধর্ষন করার পর মেয়েটিকে হত্যা করা ইত্যাদি।
আপনার বাড়ির কাজের লোক কি আপনার সাথে এক সোফায় বসতে পারে? কিন্তু আপনার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে সারাদিন ঘুরতে পারে।
এক টেবিলে আপনার সাথে খেতে পারে? কিন্তু আপনার বাচ্চাকে সে খাইয়ে দিতে পারে, রঙঢঙ করে, গল্প করে আপনার বাচ্চা কে সে খাওয়াতে ব্যস্ত থাকে।
আত্নসম্মান বোধ সে অনেক আগেই হারিয়েছে।
আপনার সোফায়, আপনার সামনে বসতে পারে? আপনার বাচ্চা বসে সোফায় আর সে নিচে বসে তার সাথে খেলা করে।
আপনার বাড়িতে, আপনার নিজের মেয়েরা ব্যবহার করে দামী সেনিট্যারি প্যাড আর কাজের মেয়েরা ব্যবহার করে ন্যাকড়া।
তাদের বাথরমে সাবান থাকে কিনা সে খবর ও অনেকে রাখেন না।
কিন্তু খাওয়ার সময় হয়তো ভুলে যান হরেক রকমের ভর্তাগুলো তারাই (কাজের মেয়ে/ বাবুর্চি) হাত দিয়ে চটকে মাখিয়েছে।
আপনার বাবুর্চি, ড্রাইভার তাঁদেরকে নিয়ে কোনদিন এক টেবিলে বসে খেয়েছেন? কিন্তু তাঁদের উপর অনেক বড় দ্বায়িত্ব রয়েছে, আপনার বাচ্চার জীবনের দ্বায়িত্ব, আপনার পুরো পরিবারের দ্বায়িত্ব।
আপনি বাইরে/ কাজে যাওয়ার সময় আলমারিতে তালা লাগিয়ে যান কিন্তু আপনার প্রাণপ্রিয় বাচ্চাটি থাকে কাজের লোকের সাথে। তখন ঠিক ই তার উপর ভরসা করতে পারছেন।
নিজের দেশে যে বৈষম্য, শেণীবিভেদ, হিংসা রয়েছে সেগুলো দূর করতে হবে। তা না হলে আরো অনেক নির্দোষ মানুষকে প্রাণ দিতে হবে পিলখানার মর্মান্তিক ঘটনার মত। বাংলাদেশের মানব উন্নয়নে এটি একটি বড় বাঁধা। প্রতিটি ঘর থেকে এই শ্রেণী বৈষম্যতা দূর করতে হবে।
গত পরশু এবং গতকাল অনেক অবলা জন্তুজানোয়ারের প্রাণ বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রত্যেক মানুষের ভেতরে যে পশু বাস করে তার কি কোরবানি হয়েছে? আসলে কোরবানি দেওয়া উচিত সেইসব প্রাণীদের যারা এ পৃথিবীকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে।